রামাদ্বানে যেমন রোযার মান রক্ষা না করলে, দিনগুলোর মর্ম না বুঝলে, ক্বদর অন্বেষণের রাতগুলো হেলায় কাটালে যেমন ঈদের খুশি অনুভব হবে না। তেমনি যে অন্তর যিলহজ্বের দিনগুলোর দাম বুঝেনি, আরাফাত দিবসের ভালোবাসা পৌঁছেনি, কুরবানির প্রতি দরদ জাগেনি, নি:সন্দেহে সেই অন্তরে ঈদের আনন্দের ছিটে-ফোঁটাও পৌঁছুবে না।
শেষ কবে ঈদ অনুভব করেছি মনে আছে? সেএএই ছোটকালে তাইনা? কারণ তখন মনটা কলুষতা মুক্ত ছিল। নিজেদের উপর জুলুম করিনি, জাহিলিয়াত দিয়ে জীবন সাজাইনি। এভাবেই ঈদ আসবে যাবে কিন্তু এর যে কী মূল্য, কী আনন্দ তা আর পাওয়া হবে না।
একজন কাফিরের মতোই আর দশটা দিনের সাথে এর কোনো পার্থক্য অনুভূত হবে না। কেবল ছুটির দিন মনে হবে, মুভি-ছবি-রিয়া-গেম-ঘুম দিবস মনে হবে। এই বৃত্ত থেকে বের হতে হলে এর হকগুলো আগে পূরণ করতে হবে, ঈদকে অধিকার করে নিতে হবে, মুসলিম জামাআতের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে।
দলছুট বকরির মতো ওরা যেন আমাদের গ্রাস করে না নেয়। এই নির্লিপ্ততাকে যেন স্বাভাবিক না করে দেয় একদিন। ঈমান কী, আনন্দ কী সেটা একজন মুমিনের অন্তর চিঁরে যদি দেখা যেত ইশ! তাদের জন্মদিনের শুভেচ্ছা না জানিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে দেখুন কত্ত খুশি হয়! তার কাছে এটা সাধারণ কোনো বিষয় নয়। বিনিময়ে যে দুআটা সে করবে তা কী কোনো দাম দিয়ে কেনা যায়? কে ঢেলে দিলো এমন উছ্বাস, কোথা থেকে আসলো এত খুশি? সেই অবারিত আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হবার শেষ সুযোগ এখনো যে ঐ পরম করুণাময় রেখে দিয়েছেন। শুনবেন? শুনাই?
হযরত আবু উমামা (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় দুই ঈদের রাতে জাগরণ (ইবাদত-বন্দেগী) করবে; তার ক্বালব ওই (কিয়ামতের) দিনেও মরবে না, যে দিন (ভয়ঙ্কর ও বিভীষিকাময় পরিস্থিতির কারণে) মানুষের অন্তর সমূহ মারা যাবে।’ [ইবনে মাজাহ]
নিরাশ অন্তরসমুহ যেন জেনে রাখে যে ৫টি রাতের দু’আ কখনও ফিরিয়ে দেয়া হয় না। জুমআর রাত, রজব মাসের প্রথম রাত, শাবানের ১৫তারিখের রাত, ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহার রাত। [আস-সুয়ূতি]
এরপরও কি অন্তরগুলো মৃত থাকতে পারে! ওহে অন্তর, তোমাকে জান্নাত ওয়াজিব করা আরো ৫ রাতের সংবাদ দিই?
এক. ১৫ শাবানের রাত।
দুই. যিলহজ্বের ৮ তারিখের রাত।
তিন. যিলহজ্বের ৯ তারিখের রাত।
চার. ঈদুল ফিতরের রাত।
আর পাঁচ. ঈদুল আযহার।
কত রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলাম। আর একটা রাতে একটু ইবাদাত করতে পারব না? দুই রাকাআত নামাযও পড়তে পারব না? হাত তুলে চাইতে পারব না? কালকে সবাই আনন্দ করবে, আর আমার মনের ঘরে আনন্দ হবে না?
বোনেরা আনন্দ করুন, হাতে মেহেদি লাগান। তবে সাবধান ভাইদের হাত যেন তাতে না রাঙে[তিরমিযী ২৭৮৭]। নারীরা নারী সুলভ এবং পুরুষেরা পুরুষ সুলভ আচরণ ও পোশাকে রাঙবে। নাহলে যে আনন্দের দিন লানতের দিনে পরিণত হয়ে যাবে।
দ্বীনের সুবিশাল বৃত্তের ভিতর থেকে যত খুশি আনন্দ করবেন। তবে সাবধান! বিউটি পার্লার আর স্মার্ট বিউটি ফিল্টার নামক মানসিক পঙ্গুত্ব বরণ থেকে সতর্ক থাকতে হবে। ওদের দেখান গোলামি থেকে বের হতে হবে। মাথাটা দৈনিক পাঁচবার স্রষ্টার সামনে নামাতে হবে। নাহলে আপনা-আপনি এসব প্রভুর সামনে মাথা একদিন নয়, প্রতিদিন নামাতে হবে।
ভাইয়েরা ১৩ই যিলহজ্ব, বৃহঃবার আসর পর্যন্ত প্রতি ফরয সালাতের পর একবার নিজ দায়িত্বের(ওয়াজিব) তাকবীর তাশরিক দিবেন। মদিনার অলি-গলি যেভাবে কেঁপে উঠত সেভাবে দিবেন। নিজের অস্তিত্বের জানান দিবেন। তাগুতের অন্তর শুকিয়ে দিবেন। এভাবেই ঈদের ময়দানেও যাবেন। বলবেন,
ﺍﻟﻠﻪُ ﺃَﻛْﺒَﺮُ، ﺍَﻟﻠﻪُ ﺃﻛْﺒَﺮُ، ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠﻪُ، ﻭَﺍﻟﻠﻪُ ﺃَﻛْﺒَﺮُ، ﺍَﻟﻠﻪُ ﺃَﻛْﺒَﺮُ ﻭَﻟِﻠﻪ ﺍﻟﺤَﻤْﺪُ
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ 🔥
ফিরে আসবেন। নিজ হাতে বড় আদরে, যত্নে, সবচেয়ে কম কষ্ট দিয়ে আল্লাহর নামে কুরবানি দিবেন। হৃদয় যেন কেঁদে ওঠে এমন কুরবানি দিবেন। এরপর হাত তুলে যখন দুআ করবেন, দেখবেন কেমন প্রশান্তি অনুভূত হয়।
খাপছাড়া অনেক আবোল-তাবোল বললাম। বললাম যাতে এই আনন্দে আমার সব ভাই, সব বোন শরীক হয়। অন্তর তাজা করার মৌসুমে কেউ যেন খালি হাতে ফিরে না যায়। ইয়া আল্লাহ কেউ যেন খালি হাতে ফিরে না যায়।
تقبل الله منا ومنكم
তাক্বাব্বালআল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম
আল্লাহ আমাদের এবং আপনাদের সকলের নেক প্রয়াস কবুল করুক। আ-মীন।
ঈদুন সাঈদ ওয়া ঈদ মুবারাক। 💐
Discussion about this post