মাওলানা ইলিয়াস ঘুম্মান হাফিযাহুল্লাহ।
পাকিস্তানের যোগ্যতম আলেম, মুতাকাল্লিমে ইসলাম ও আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর বলিষ্ঠ ভাষ্যকার।
করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে সম্প্রতি তাঁর ১০টি জরুরি ফতোয়ার ছোট্ট পুস্তিকা বেরিয়েছে।
লেখালেখির প্রচণ্ড ব্যস্ততা সত্ত্বেও বাংলাভাষী পাঠকদের জন্যে সেগুলোর অনুবাদ শুরু করেছি।
তথ্য সংরক্ষণের জন্যে প্রতিটি ফতোয়া পিকচার আকারে দিচ্ছি।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে সকল আসমানি-জমিনি বিপদাপদ থেকে হিফাজত করুন। বেশি বেশি তাওবা, ইসতিগফার ও যিকির আদায় করার তাওফিক দিন। আমিন।
ফতওয়া – এক
প্রশ্ন – করোনা ভাইরাসের কারণে সতর্কতামূলক পদক্ষেপের অংশ হিসাবে মুখে মাস্ক পরা, হাত ধোয়া ইত্যকার কাজগুলোর শরই বিধান কী?

ফতোয়া নং : ২
করোনা ভাইরাসের কারণে মসজিদ বন্ধ করা যাবে কি?
প্রশ্ন :
করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে কিছু কিছু রাষ্ট্রে মসজিদ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জুমুআর নামায ও জামাতের নামায ঘরে পড়ার কথা বলা হচ্ছে। এ ধরনের সুরতহালে আমরা আমাদের ঘরে নামায কীভাবে পড়ব? একাকী পড়ব, না জামাতের সঙ্গে পড়ব?
উত্তর :
মসজিদ বন্ধ করে দেওয়া এবং জুমুআর জমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা সঠিক নয়। কিন্তু যেহেতু প্রশাসন মসজিদ বন্ধ করেছে, কাজেই আপনি গুনাহগার হবেন না; বরং প্রশাসন গুনাহগার হবে। হ্যাঁ, যাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি রয়েছে, তারা যেন প্রশাসনের কর্মকর্তা ও দায়িত্বশীলদের বিষয়টি বুঝিয়ে বলে।
এ ধরনের পরিস্থিতিতে জামাতের সঙ্গে নামায আদায় করার জন্যে এ পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে যে, সুন্নত নামাযগুলো ঘরে আদায় করে আসবে। ফরয নামাযের পর অবশিষ্ট সুন্নতগুলোও মসজিদের পরিবর্তে বাসায় আদায় করবে। কেননা ঘরে সুন্নত পড়া অতিউত্তম। তদ্রূপ মুসুল্লিগণ ঘর থেকেই অযু করে আসবেন। জুমুআর নামাযসহ সকল নামায ও ইবাদত সংক্ষিপ্তভাবে আদায় করাই উত্তম।
যদি প্রশাসন এ নির্দেশনা জারি করে যে, সবাইকে ঘরের ভেতরেই নামায পড়তে হবে, তাহলে এ ধরনের পরিস্থিতিতে ঘরের মাঝে জামাতের সঙ্গে বা একাকী, উভয় সুরতে নামায আদায় করা জায়েয। জামাতের সঙ্গে নামায পড়া অধিক উত্তম।

করোনা সংক্রান্ত ফতোয়া : ৩
আযানে বিশেষ বাক্যযোগ
“প্রশ্ন :
আযানের পর صَلُّوْا فِي بُيُوْتِكُمْ (সল্লু ফি বুয়ুতিকুম) বা صَلُّوْا فِي رِحَالِكُمْ (সল্লু ফি রিহালিকুম) বলা কি বৈধ?
উত্তর :
বিশেষ পরিস্থিতিতে এ ধরনের বাক্য ঘোষণা করা হাদিস থেকে প্রমাণিত।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাদি. প্রবল বর্ষণমুখর একদিনে আযান দেন। এরপর উচ্চ স্বরে বলেন, ألَا صَلُّوْا فِي رِحَالِكُمْ (হে লোকসকল, নিজ বাসস্থলেই নামায পড়ে নাও।)
এরপর বলেন, নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবল ঠাণ্ডা ও বর্ষণমুখর রাতে মুয়াজ্জিনদের নির্দেশ করতেন, ‘তারা যেন ঘোষণা করে জানিয়ে দেয় যে, সবাই নিজ নিজ বসতবাড়িতে নামায পড়ে নাও।’
[সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ৬৬৬]”
.
আল্লাহ তাআলা আমাদের দেশে যেন এমন পরিস্থিতির অবতারণা না করেন।
সবাই বেশি বেশি তাওবা-ইসতিগফার করি।
স্বাস্থ্য নির্দেশিকা শতভাগ মেনে চলি।

“করোনা সংক্রান্ত ফতোয়া : ৪
জুমুআ নিষিদ্ধ হলে…
প্রশ্ন :
জুমুআর দিনেও প্রশাসনের নির্দেশে মসজিদ খোলা হচ্ছে না। জুমুআর নামায ও খুতবা হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে যোহরের নামায আদায় করতে হবে, নাকি জুমুআর নামায?
দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, যদি দু’ বা তিন ব্যক্তি মিলে নিজেদের ঘরে বা কামরায় জুমুআর নামায আদায় করে, তাহলে কেমন হবে?
উত্তর :
যেমনটি আমরা আগেও বলেছি যে, মসজিদ বন্ধ করা ও জুমুআর নামাযের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা জায়েয নয়। জুমুআ মসজিদেই আদায় করা উচিত। কিন্তু যদি রাষ্ট্রের তরফ থেকে প্রতিবন্ধকতা আসে তাহলে এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিভিন্ন জায়গায় কিছু লোক একত্র হয়ে জুমুআ আদায় করে নেবে। কেননা হানাফি মাযহাব অনুসারে জুমুআর নামাযের জন্যে ইমাম ব্যতীত তিন ব্যক্তিই যথেষ্ট।
কাজেই এ ধরনের জরুরি পরিস্থিতি নেমে এলে এক ব্যক্তিকে ইমাম বানিয়ে নেবে এবং সংক্ষিপ্ত খুতবা হবে। খুতবার মাঝে আল্লাহর প্রশংসা ও তাকওয়ার আলোচনা থাকবে। যদি মসজিদে জুমুআ আদায় করার অবকাশ থাকে তাহলে এ ধরনের পরিস্থিতিতে মসজিদে শুধু জুমুআই আদায় করা যাবে।”
…
বি.দ্র. :
ফতোয়া আসে মাসআলা অনুসারে। কোন পরিস্থিতিতে কোন ফতোয়া প্রজোয্য, তা শুধু অভিজ্ঞ মুফতিয়ানে কেরামই বলতে পারবেন। কাজেই কেউ নিজ থেকে ফতোয়া দেবেন না। কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেবেন না।
সবসময় নিজ অঞ্চলের দেওবন্দি হক্কানি উলামায়ে কেরামের ফতোয়া অনুসরণ করুন।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে সীরাতে মুসতাকিমের অনুসারী করুন। বেশি বেশি দুআ-দরুদ ও তাসবিহ আদায়ের তাওফিক দিন।
সবাই সবার জন্যে দুআ করি।

করোনা সংক্রান্ত ফতোয়া : ৫
জুমুআর সংক্ষিপ্ত খুতবা
আপদকালীন পরিস্থিতির জন্যে প্রস্তুত থাকি।

করোনা সংক্রান্ত ফতোয়া : ৬
বিশ্বের প্রায় ১৯৫টি দেশে ইতোমধ্যে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা অসংখ্য ক্রমশ বাড়ছে…
প্রতিদিন শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে। কোথাও কোথাও প্রতি দু’ মিনিটে একজন করে মানুষ মারা যাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে দারুল উলূম দেওবন্দের মুহতামিম মাওলানা আবুল কাসিম নুমানি ও ভারতের গবেষক মুফতি মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রহমানি প্রমুখ আলেম নির্দিষ্ট দায়িত্বশীলদের মাধ্যমে মসজিদে আযান ও জামাত চলমান রাখার শর্তে সকল মুসলমানকে নিজ নিজ ঘরে নামায পড়ার সনির্বন্ধ অনুরোধ জানিয়েছেন।
কাজেই ঘরের সীমিত পরিসরে জামাত আদায়ের পদ্ধতি কী হবে, তা জেনে রাখা মুসলমানদের দায়িত্ব।
আপনি আপনার মহল্লার ইমাম সাহেব ও উলামায়ে কেরামের সঙ্গে ফোনে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখুন। আপদকালীন পরিস্থিতিতে কোনো দ্বীনি মাসআলায় নিজ থেকে ইজতিহাদ (বিধান উদ্ভাবন) না করে সম্মানিত মুফতিদের শরণাপন্ন হোন।
.
পাশাপাশি প্রশাসনের দায়িত্বশীলদের অনুরোধ করবো, তারা করোনা ভাইরাসের জন্যে যেই হটলাইন চালু করেছে, সেখানে যেন অন্তত দু’জন যোগ্য মুফতিকেও নিয়োগ প্রদান করে। যেন সেখান থেকে জীবন রক্ষাকারী নির্দেশনার পাশাপাশি ঈমান রক্ষাকারী নির্দেশনাও চলে আসে।

করোনা সংক্রান্ত ফতোয়া : ৭ ও ৮
১.
করোনা ভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে
মুখে মাস্ক নিয়ে নামায পড়া যাবে।
২.
বাজারে সংকট সৃষ্টি না হয়, সে পরিমাণ প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য ক্রয় করে আপদকালীন পরিস্থিতির জন্যে প্রস্তুতি নেওয়া যাবে।

করোনা সংক্রান্ত ফতোয়া : ৯
মহামারী কেন্দ্র করে আযান দেওয়া বিদআত
মহামারীর প্রাদুর্ভাবের প্রাক্কালে আযান দেওয়া ইসলামি শরিয়তমতে সুন্নাত বা মুসতাহাব নয়। বরং অনেক আলেমের মতে, এটি জায়েয নয়।
ফকিহুন নফস মাওলানা রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি রহ. লিখেছেন,
طاعون، وبا وغيره امراض كے شيوع كے وقت كوئى خاص نماز احاديث سے ثابت نهىں. نه اس وقت اذانيں كهنا كسى احاديث مىں وارد هوا هے. اس لئے اذان كو يا جماعت كو ان موقعوں ميں ثواب يا مسنون يا مستحب سمجھنا خلاف واقع هے
(فتاوى رشيديه، كتاب العلم)
“মহামারী, প্লেগ ইত্যকার রোগের প্রাদুর্ভাবের সময় কোনো বিশেষ নামায হাদিসে প্রমাণিত নেই। এ সময় আযান বলার কথাও কোনো হাদিসে বর্ণিত নেই। কাজেই এ ধরনের পরিস্থিতিতে আযান বা জামাতকে সাওয়াবের কাজ বা সুন্নত বা মুসতাহাব বিশ্বাস করা বাস্তবতার পরিপন্থী।”
(ফতোয়ায়ে রশিদিয়া, কিতাবুল ইলম)
হযরত আশরাফ আলি থানভি রহ. থেকেও অনুরূপ ফতোয়া রয়েছে। দেখুন, আগলাতুল আওয়াম, পৃষ্ঠা : ৩৪
..
ফতোয়া দিয়েছেন,
মাওলানা মুবিনুর রহমান
ফাযিলে দারুল উলূম করাচি, পাকিস্তান

করোনা সংক্রান্ত ফতোয়া : ১০
যাদের জন্যে মসজিদে আসা উচিত নয়।
আলহামদুলিল্লাহ,
বাংলাদেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমে দ্বীন মাওলানা আবদুল মালেক সাহেব (আমিনুত তালিম, মারকাযুদ দাওয়াহ) করোনা ভাইরাসের কারণে মসজিদ ও নামায আদায়ের সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনামূলক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।
সাক্ষাৎকারগ্রহণ করেছেন মাওলানা সাঈদুল হক
যা ‘রিসালাতুল ইসলাম বিডির ফেসবুক পেইজে একটু আগে পোস্ট হয়েছে।
সেখান থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হুবহু নকল করা হচ্ছে।
একটু অপেক্ষা করুন, সেখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ উত্তরগুলো পিক আকারে একের পর এক আপলোড করব, ইনশাআল্লাহ।
প্রথম_শ্রেণি, যাদের জন্যে মসজিদে আসা উচিত নয়।
“প্রশ্ন : এ ধরনের পরিস্থিতিতে কাদের জন্য মসজিদে আসা উচিত নয়?
উত্তর : ক. যারা এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। (বর্তমান পরিস্থিতিতে অবশ্য তাদের আসার তো সুযোগও নেই।)
খ. যারা অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত রয়েছেন, কিন্তু আযীমতের উপর আমল করে মসজিদে উপস্থিত হয়ে থাকেন। তাদেরও এ পরিস্থিতিতে মসজিদে আসা উচিত নয়।
গ. বিশেষকরে যারা সর্দি-কাশি ও ঠাণ্ডা-জ্বরে আক্রান্ত তারা সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার পূর্বে মসজিদে কোনোভাবেই আসবেন না।
ঘ. ষাট বা তদূর্ধ্ব মুরব্বীগণ মসজিদে না আসা উচিত।
ঙ. বিশেষকরে যে সকল মুরব্বী কোনো রোগে আক্রান্ত রয়েছেন তারা বিলকুল মসজিদে আসবেন না।
চ. এ পরিস্থিতিতে নাবালেগ শিশুরা, বিশেষকরে যারা খুব ছোট তারা মসজিদে একেবারেই আসবে না।
ছ. যারা এমন কোনো অঞ্চল বা পরিবেশ থেকে এসেছেন যেখানে এ মসিবত বিস্তার লাভ করেছে, তারাও এমন পরিস্থিতিতে মসজিদে একেবারে আসবেন না।
জ. কোনো বিশেষ এলাকা যেমন- কোনো বাড়ি, টাওয়ার, পাড়া, মহল্লা ইত্যাদির ব্যাপারে যদি সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কারণে বিশেষ নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয় তাহলে এমন লোকেরাও মসজিদে আসবে না।
উল্লিখিত মুসল্লীগণ ঘরে নামায আদায় করবেন। অন্তরে মসজিদে উপস্থিত হতে না পারার কারণে আক্ষেপ পোষণ করবেন। ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে আপন শান মোতাবেক সওয়াব দান করবেন।
ঝ. কোনো কোনো মসজিদে এ প্রচলন রয়েছে, যা না হওয়া উচিত, সেখানে নারী মুসল্লীগণও উপস্থিত হয়ে থাকেন। এ প্রচলন তো এমনিতেই সংশোধনযোগ্য। তথাপি এ পরিস্থিতিতে মসজিদে তাদের উপস্থিত হওয়ার প্রশ্নই আসে না।”

করোনা সংক্রান্ত ফতোয়া : ১১
দ্বিতীয় শ্রেণী,
যাদের জন্যে এ সময় মসজিদে না আসার অনুমতি রয়েছে…
উত্তর দিয়েছেন,
মাওলানা আবদুল মালেক হাফিযাহুল্লাহ
আমিনুত তালিম, মারকাযুদ দাওয়াহ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
বিশেষ দ্রষ্টব্য :
ফতোয়া বুঝতে আগের ও পরের ফতোয়াগুলোও নিবিড়ভাবে অধ্যয়ন করুন।

করোনা সংক্রান্ত ফতোয়া : ১২
তৃতীয় শ্রেণী
যারা মসজিদে আসা অনুচিত শ্রেণির কাতারে পড়ে না,
এবং যারা মসজিদে না আসার অনুমতি আছে,
এমন দ্বিতীয় শ্রেণীর কাতারেও পড়ে না,
এই তৃতীয় শ্রেণি যদি মসজিদে না আসে?
উত্তর দিয়েছেন,
মাওলানা আবদুল মালেক হাফিযাহুল্লাহ
আমিনুত তালিম, মারকাযুদ দাওয়াহ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
বিশেষ দ্রষ্টব্য :
ফতোয়া বুঝতে আগের ও পরের ফতোয়াগুলোও নিবিড়ভাবে অধ্যয়ন করুন।

করোনা সংক্রান্ত ফতোয়া : ১৩
এ মুহূর্তের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়া
জুমুআর_জামাতে কাদের না আসা উচিৎ?
কাদের না আসার অনুমতি রয়েছে?
এবং না এলে কাদের গুনাহ হবে না?
উত্তর দিয়েছেন, মাওলানা আবদুল মালেক হাফিযাহুল্লাহ
বিশেষ দ্রষ্টব্য :
ফতোয়া বুঝতে পূর্বের ৪টি ফতোয়া ভালোভাবে বুঝে নিন।

করোনা সংক্রান্ত ফতোয়া : ১৪
১.
এই বঙ্গদেশে এমন লাখো মানুষ পাবেন, যারা আজকের ফজর নামায পড়েনি। অথচ ঠিকই জুমুআর নামায পড়তে মসজিদে দলে দলে চলে এসেছে। এদের সিংহভাগ হয়তো আজ আসর নামায পড়তেও মসজিদে আসবে না।
…
এই বঙ্গদেশে এমন হাজারো মানুষ পাওয়া যাবে, যারা করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের আগে পশ্চিমমুখী হতো না। এখন সে হুজুরদের চেয়েও বড় ধার্মিক। ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কেটে গেলে, সে আবার হয়তো তার পূর্বের বাউন্ডুলে জীবনে ফিরে যাবে। কুরআন কারিমে ১৪শ বছর আগের হতভাগ্যদের যেই চিত্র আঁকা হয়েছে, তার সঙ্গে মিলে যাবে অবিকল।
অথচ তাদের আকস্মিক উপস্থিতি ও গৎবাধা প্রস্থানের ওপর ‘সুবহানাল্লাহ’ বলার লোকের অভাব হবে না
…
নিজেকে প্রশ্ন করি, এটা কি দ্বীন ও শরিয়ত? নাকি আবেগ?
…
২.
কাগজের উল্টো পিঠ…
এই ফেসবুকে এমন শত শত সচেতন ফেসবুকার পাওয়া যাবে, যারা করোনা সংক্রান্ত সচেতনতামূলক দেদারছে পোস্ট করছেন। সবাইকে মুহুর্মুহু সচেতন করছেন। জমায়েত হতে বারণ করছেন।
কিন্তু উলামায়ে কেরাম যে এই সচেতনতার পাশাপাশি তাওবা-ইসতিগফার করতে বলেছেন, গুনাহ বর্জন করতে বলেছেন, অশ্লীল চিত্র দেখতে বারণ করেছেন, সেদিকে ন্যূনতম ভ্রুক্ষেপ নেই।
আলেমগণ যে আজ সূরা কাহাফ ও বেশি বেশি দরুদ পাঠ করতে বলেছেন, ব্যক্তিগত আমল সমৃদ্ধ করতে বলেছেন। সেদিকে কোনো দৃষ্টি নেই।
নিজেকে প্রশ্ন করি, এর নাম কি মহামারী সচেতনতা?
৩.
আমি মনে করি, পাক-ভারত ও বাংলাদেশের উলামায়ে কেরাম মহামারী কেন্দ্রিক সতর্কতার প্রেক্ষিতে যতটুকু সতর্ক করার দরকার, তা তারা করেছেন। গণজমায়েত থেকে বারণ করার সুচিন্তিত কর্মপন্থা বাতলে দিয়েছেন। আবেগপ্রবণ জাতি কানে তোলেনি।
উলামায়ে কেরাম তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন।
আল্লাহ না করুন, খোদা না খাস্তা, আল ইয়াযু বিল্লাহ, যদি করোনা ভাইরাস সামনে অনিয়ন্ত্রিত চেহারায় আত্মপ্রকাশ করে, তাহলে সরকার থেকে শুরু করে জনগণ, কেউ উলামায়ে কেরামকে কাঠগড়ায় তুলতে পারবে না।
আল্লাহ যেন কখনো এমন দিন না আনেন।
আমরা দুর্বল বান্দা। কঠিন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার যোগ্যতা ও হিম্মত নেই। আল্লাহ যেন নিজ করুণায় আমাদের ওপর দয়া করেন। এ মুহূর্তে সেটাই সবচেয়ে বড় কাম্য।

Discussion about this post