মুসলিম ইংক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আরবের মদিনার তাইবাহ ইউনিভার্সিটির গবেষকরা দাবি করেছেন, করোনায় আক্রান্ত রোগীদের সফলভাবে চিকিৎসা করেছেন তাঁরা। এ জন্য ব্যবহার করা হয়েছে কালিজিরা, যা হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দেখানো চিকিৎসা পদ্ধতি। ওই দলের গবেষণাপত্র ছাপা হয়েছে মার্কিন জার্নাল পাবলিক হেলথ রিসার্চে।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, কালিজিরায় সকল প্রকার রোগের উপশম আছে, তবে ‘আস্সাম’ ব্যতীত। আর ‘আস্সাম’ হলো মৃত্যু। এর ‘আল হাব্বাতুস্ সাওদা’ হলো (স্থানীয় ভাষায়) ‘শূনীয’ (অর্থাৎ কালিজিরা)। (মুসলিম, হাদিস : ৫৬৫৯) হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুল (সা.) বলেছেন, “কালিজিরা সকল রোগের ওষুধ কেবল বিষ ছাড়া। ” তিনি (আয়েশা) বললেন ‘বিষ’ কী? জবাবে নবী (সা.) বললেন, “মৃত্যু”। (সহীহ বুখারী হাদিস :৫৩৬৩ )
এই হাদিস অনুযায়ী ওষুধ বানিয়ে করোনা চিকিৎসায় অবিশ্বাস্য সাফল্যের দাবি সৌদি গবেষকদের। হাদিসের এই বাণীর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ‘তাইবুভিড’ নামে একটি ওষুধ তৈরি করেছে মদীনার ‘তাইবাহ ইউনিভার্সিটির অ্যান্টি-কোভিড ট্রিটমেন্ট’ গবেষক দল। আমেরিকান জার্নাল ‘পাবলিক হেল্থ রিসার্চ’ এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করেছে।
এই ওষুধের মূল উপাদান হল:- কালিজিরা, ক্যামোমিল ও প্রাকৃতিক মধু। গবেষণাপত্র অনুযায়ী, এক ডোজ তাইবুভিডে রয়েছে, “এক চা চামচ (২ গ্রাম) কালিজিরা, এক চা চামচ (১ গ্রাম) ক্যামোমিল চূর্ণ এবং এক চা চামচ প্রাকৃতিক মধু।” খাবারের নিয়মএই উপাদানগুলো ভালভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর ভালভাবে চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে হবে।
গবেষণাপত্রে উল্লেখ রয়েছে, কালিজিরা ব্যবহারের ফলে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। টিস্যু সুরক্ষিত থাকে, ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয় না এবং ভাইরাস সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কালিজিরা হলো রাসুল (সা.)-এর দেখানো চিকিৎসা উপকরণ। এটা বীজ আকারে কিংবা গুঁড়া করেও খাওয়া যায়। এ ছাড়া খাবারের সঙ্গে কিংবা জুস আকারেও খাওয়া যায়। অনেকেই কালিজিরার তেল খায়।
কালিজিরার রয়েছে নানা গুণ। এতে রয়েছে নাইজেলোন, থাইমোকিনোন, লিনোলিক অ্যাসিড, ওলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিংক, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফেট, সেলেনিয়াম, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-বি২, নায়াসিন, ভিটামিন-সি, ফসফরাস ও কার্বোহাইড্রেট।
গবেষকদের দাবি, কালিজিরা ব্যবহারের ফলে মারাত্মক সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়, ফুসফুসের সমস্যা ধীরে ধীরে সেরে যায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ফুসফুস এবং শ্বাসনালি ভালো রাখতে কালিজিরা দারুণ কাজের। যাদের শ্বাসকষ্ট রয়েছে, কালিজিরা ব্যবহারে তারাও আরোগ্য লাভ করে। শ্বাসযন্ত্রে যেকোনো ধরনের সংক্রমণ ঠেকাতে কালিজিরা অব্যর্থ ওষুধ। অ্যালার্জি থেকে মুক্তি দিতেও কালিজিরা কার্যকর। ভাইরাল হেপাটাইটিস সি-তে আক্রান্ত রোগীও কালিজিরা ব্যবহারে উপকার পায়। এইচআইভি এইডসে আক্রান্ত রোগীদের জন্যও কালিজিরা উপকারী।
খাবারের নিয়ম:
“এক চা চামচ (২ গ্রাম) কালিজিরা, এক চা চামচ (১ গ্রাম) ক্যামোমিল চূর্ণ এবং এক চা চামচ প্রাকৃতিক মধু ভালভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর ভালভাবে চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে হবে। উল্লেখ্য, এটা খাওয়ার পর জুস, কমলা ও লেবু খেলে আরও ভাল। চিকিৎসা• প্রথম এক সপ্তাহ প্রতিদিন পাঁচবার করে এই ওষুধ খেতে হবে। এরপর মহামারী শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন একবার করে খেতে হবে।
চিকিৎসা:
• প্রথম এক সপ্তাহ প্রতিদিন পাঁচবার করে এই ওষুধ খেতে হবে। এরপর মহামারী শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন একবার করে খেতে হবে।
• যদি তীব্র কাশি ও শ্বাসকষ্ট থাকে, কালিজিরা অথবা লবঙ্গ দিয়ে গরম পানির ভাপ নিতে পারেন। অথবা কালিজিরা ও ক্যামোমিল দিয়েও গরম পানির ভাপ নেওয়া যেতে পারে।
• উপরের দুইটি উপাদানের যেকোনও একটি নেবুলাইজারে দিয়ে তা নাসারন্দ্র দিয়ে গ্রহণ করুন।
• যদি নেবুলাইজার না থাকে, সেক্ষেত্রে এক টেবিল চামচ কালিজিরা, এক টেবিল চামচ ক্যামোমিল চূর্ণ এবং এক কাপ পানি একটি পাত্রে নিয়ে গরম করে ভাপ নিতে হবে। এভাবে দিনে ৫ থেকে ৬ বার নিতে হবে
তাইবাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষক দলের প্রধান ডা. সালাহ মোহাম্মদ আল সাঈদ বলেন, “আমরা করোনাভাইরাসের চিকিৎসার জন্য কালিজিরা, ক্যামোমিল, লবঙ্গসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান নিয়ে গবেষণার পর আশানুরূপ ফল পেয়েছি। গবেষণার পর আমরা যা পেয়েছে, সেটি হচ্ছে- কালিজিরা এবং ক্যামোমিল করোনাভাইরাসকে পুরোপুরি দমন করতে পারে। তিনি আরও বলেন, “আল্লাহ তা’আলার কৃপায় যেসব করোনা আক্রান্ত রোগী এই ওষুধ গ্রহণ করেছেন, তারা খুব ভাল উপকার পেয়েছেন। তারা এটি নিজেরা বাড়িতেই তৈরি করেছেন।” “এই ওষুধে উপকার পেতে এক সপ্তাহের বেশি সময় লাগেনি,” যোগ করেন তিনি।
ওই গবেষকদলের গবেষণাপত্র ছাপা হয়েছে মার্কিন জার্নাল ‘পাবলিক হেলথ রিসার্চ’-এ। আর সেটা যে কেউ চাইলেই দেখতে পারবে।
সূত্র : https://www.muslimink.com/news/madinah-researchers-find-covid-19-treatment/
Discussion about this post