জারজ সন্তানের আধিক্য কিয়ামতের একটি আলামত : মুফতি তারেকুজ্জামান
কিয়ামতের পূর্বে মুসলমানদের মধ্যে জারজ সন্তানের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে। জারজ সন্তান যেমন সরাসরি জিনার মাধ্যমে হয়, অনুরূপ অনেক সময় বিবাহের রূপেও সেটা হয়ে থাকে। মানুষ বিবাহ তো করে, কিন্তু তালাকের ব্যাপারে কোনো মাসআলা জেনে নেয় না। পরে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কখনো মনমালিন্য বা বিবাদ হলে দেখা যায়, স্বামী তার স্ত্রীকে তালাকে বায়েন বা অনেক ক্ষেত্রে তিন তালাকই দিয়ে দেয়। এরপর যখন উভয়ে নিজেদের ভুল বুঝতে পারে, তখন তারা আবার ঝগড়া মিটমাট করে সংসার করতে থাকে। অনেকে তো এটাকে কিছু মনে না করে কিংবা তালাক অস্বীকার করে দিব্যি সংসার করে যাচ্ছে! আর কেউবা কিছু মনে করলেও সঠিক নিয়মে বিবাহ নবায়ন করে না এবং তিন তালাকের ক্ষেত্রে টাকার বিনিময়ে গ্রাম্য বা দুনিয়াদার মৌলভি থেকে ভ্রান্ত ফতোয়া নিয়ে কিংবা অবৈধভাবে হিলা বিবাহের মাধ্যমে নিজ স্ত্রীকে নিয়ে পুনরায় সংসার করতে থাকে। নাউজুবিল্লাহ।
আবার উল্টোটাও ঘটছে। স্বামীর পরিবর্তে এখন স্ত্রীরাই যখনতখন ডিভোর্স দিয়ে অন্যত্র বিয়ে বসছে; অথচ শরিয়া অনুযায়ী যাচাই করলে দেখা যায়, বর্তমানের অধিকাংশ ডিভোর্সই সঠিক হয় না। শুধু তালাকনামা দেখিয়েই সব কাজ সারা হয়। শরিয়া অনুযায়ী তালাক হলো কি হলো না, সেদিকে না মেয়ের কোনো ভ্রুক্ষেপ আছে, আর না আছে তার অভিভাবকদের। সজ্ঞানে স্বামীর অনুমোদন ছাড়া নিজের মনমতো ডিভোর্স দেওয়ার হার পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি। শুধু কাবিননামায় কাজির লিখে দেওয়া মুখস্থ কিছু বাক্যের ওপর নির্ভর করেই অধিকাংশ ডিভোর্স নেওয়া হয়, যার শরয়ি কোনো ভিত্তি নেই। তাই এ পন্থায়ও ডিভোর্সি স্ত্রীর পরবর্তী বিবাহ সঠিক না হওয়ায় জিনার অন্তর্ভুক্ত হবে এবং অনাগত সব সন্তান জারজ বলে বিবেচিত হবে।
বস্তুত বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ এসবের কোনো তোয়াক্কাই করে না! স্ত্রী হারাম হয়ে গেলেও সে তার সাথে স্বাভবিক নিয়মেই ঘর-সংসার করে যাচ্ছে। তাদের থেকে সন্তানও আসছে।
অথচ এসব সন্তান সামাজিক নিয়মে পিতার বৈধ সন্তান হলেও ইসলামি আইনানুসারে জারজ সন্তান বলে বিবেচিত। বর্তমান সমাজ এমন সন্তানদের দ্বারা ধীরে ধীরে ভরে উঠছে। অরাজকতা, অশ্লীলতা, ফিসক ও ফুজুর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবেই জাতি হয়ে উঠছে চরম অজ্ঞ, একগুঁয়ে, নীতিহীন ও জালিম।
বর্তমানে যেসব অকল্পনীয় অশ্লীলতা, অরাজকতা, উগ্রতা ও বাধাহীন চলাফেরার নমুনা দেখা যাচ্ছে, তাতে অনুমেয় হয়, সমাজে এসব সন্তানদের আনাগোনা অনেক বেড়ে গেছে। কিয়ামতের ছোট ছোট আলামত প্রকাশের ধারাও প্রায় শেষ হয়ে আসছে। শীঘ্রই হয়তো বড় আলামত প্রকাশের কথাও শোনা যাবে।
নিম্নে আমরা কিয়ামতের পূর্বে জারজ সন্তানের আধিক্য-সংক্রান্ত হাদিসটি তুলে ধরছি।
মুজামে আওসাত তাবারানিতে বর্ণিত হয়েছে :
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، هَلْ لِلسَّاعَةِ مِنْ عِلْمٍ تُعْرَفُ بِهِ السَّاعَةُ؟ فَقَالَ: نَعَمْ، يَا ابْنَ مَسْعُودٍ، إِنَّ لِلسَّاعَةِ أَعْلَامًا، وَإِنَّ لِلسَّاعَةِ أَشْرَاطًا… يَا ابْنَ مَسْعُودٍ، إِنَّ مِنْ أَعْلَامِ السَّاعَةِ وَأَشْرَاطِهَا أَنْ يَكْثُرَ أَوْلَادُ الزِّنَا. قُلْتُ: يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ، وَهُمْ مُسْلِمُونَ؟ قَالَ: نَعَمْ. قُلْتُ: أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ، وَالْقُرْآنُ بَيْنَ ظَهْرَانَيْهِمْ؟ قَالَ: نَعَمْ. قُلْتُ: أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ، وَأَنَّى ذَلِكَ؟ قَالَ: يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ يُطَلِّقُ الرَّجُلُ الْمَرْأَةَ، ثُمَّ يَجْحَدُهَا طَلَاقَهَا، فَيُقِيمُ عَلَى فَرْجِهَا، فَهُمَا زَانِيَانِ مَا أَقَامَا.
‘আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, কিয়ামতের কি এমন কিছু আলামত রয়েছে, যদ্বারা কিয়ামতের বিষয়ে অবগত হওয়া যাবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, হে ইবনে মাসউদ। নিশ্চয় কিয়ামতের অনেক আলামত ও নিদর্শন আছে।
…হে ইবনে মাসউদ, কিয়ামতের আলামত ও নিদর্শনসমূহের একটি হলো, জারজ সন্তান বৃদ্ধি পাবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, হে ইবনে মাসউদ, তারা কি মুসলমান? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, হে ইবনে মাসউদ, তাদের সামনে কি কুরআন থাকবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম হে ইবনে মাসউদ, তাহলে এমনটা (জারজ সন্তানের বৃদ্ধি) কীভাবে হবে? তিনি বললেন, মানুষের সামনে এমন একটি সময় আসবে, যখন সে তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে তা অস্বীকার করবে। অতঃপর তার সাথে সহবাসে লিপ্ত হবে। এভাবে যতদিন তারা সংসার করবে তারা ব্যভিচারী হিসেবে থাকবে।’ [আল-মুজামুল আওসাত, তাবারানি : ৫/১২৭, হা. নং ৪৮৬১, প্রকাশনী : দারুল হারামাইন, কায়রো]
তালাক দিয়ে অস্বীকার করা বা তিন তালাককে এক তালাক ভেবে স্ত্রীর সাথে দিব্যি সংসার করা এখন সমাজে সাধারণ ও ব্যাপক হয়ে গিয়েছে। অথচ এর কারণে সমাজ আজ জারজ সন্তানে ভরে উঠছে। এটা যে কিয়ামতের একটি আলামত, সে ব্যাপারে আমাদের অনেকের খবরও নেই। তাই তালাকের ব্যাপারে আমাদের সঠিক মাসআলা জেনে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে চলতে হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।
Discussion about this post