তিনি কে— এটা আসলে বলতে গেলে আরো ৩-৪ পৃষ্ঠা লাগবে, ওনার বায়োডাটা দেখে নিন। [8] অলসদের জন্য এটুকু কেবল বলি ভদ্দরলোক Professor of Bioengineering, University of Washington এবং Fellow, International Academy of Medical and Biological Engineering. আরো বহু জার্নাল-টার্নাল চালান, বহু গবেষণা প্রতিষ্ঠানের হেড, চেয়ার, প্রতিষ্ঠাতা, উপদেষ্টা, বোর্ড মেম্বার ইত্যাদি ইত্যাদি। মানে বলতে চাচ্ছি বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে তিনি একজন ‘কিছু একটা’, মেইনস্ট্রীম গবেষক এবং একজন অথোরিটি। যারা এতোক্ষণ Dr. Masaru Emoto-এর গবেষণাকে অপবিজ্ঞান বলে উন্নাসিকতার সাথে পড়ছিলেন, চেহারা ঠিক করে ফেলুন, Boss. তাঁর যুগান্তকারী বিপ্লবী একটা থিওরি আছে— “The Fourth Phase of Water”[9]
The Fourth Phase of Water (Ebner & Sons, 2013) নামে তাঁর একটা বইয়ে তিনি সর্বপ্রথম এই থিওরি তুলে ধরেন। উনার মতে কঠিন (বরফ), তরল ও বায়বীয় (বাষ্প) — এই ৩ অবস্থা ছাড়া পানির আরেকটা অবস্থা আছে, যার নাম দেন তিনি ‘৪র্থ দশার পানি’ বা EZ Water বা structured water. এটা হল বরফ আর তরল পানির মাঝামাঝি একটা দশা। কোন তলের সাথে সংলগ্ন পানির একদম তলঘেঁষা পাতলা স্তরটুকু আসলে এই ৪র্থ দশার পানি (This phase occurs next to water loving hydrophilic surfaces.)। Prof. Gerald Pollack- এর মতে মানবদেহের কোষের ভেতরের মোট ২৮ লিটার পানি ৪র্থ দশায় থাকে। তাঁর মতে, পারিপার্শ্বিক নানান ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আবেদনে পানি গঠনগতভাবে সাড়া দেয়, এমনকি এর সামান্য স্মৃতিধারণ ক্ষমতাও থাকতে পারে। মানবদেহ একটা উজ্জ্বল শক্তিক্ষেত্র (radiant energy field) তৈরি করে যা মানুষের শরীর-মনের অবস্থার ওপর পরিবর্তন হয়। কুচিন্তা ভিন্ন বর্ণালীর ভিন্ন ধরনের শক্তি দেয়, ভাল চিন্তার তুলনায়। [10]
Prof. Gerald Pollack আরও বলেন, এটা খুবই সম্ভব যে দেহের radiant energy field এর তারতম্যের কারণে কোষস্থ পানির (৪র্থ দশার) আণবিক গঠনই বদলে যাচ্ছে। একই ব্যাপার দেহের বাইরের পানির ক্ষেত্রেও অসম্ভব নয়। তিনি বিশ্বাস করেন, যেহেতু পানির স্মৃতি আছে, তাই এই উদ্দীপক (stimulus) সরিয়ে দিলেও বদলে যাওয়া গঠন তেমনই থাকছে।
Pollack সাহেবের মতে, যেহেতু মানবদেহের ৭০%-ই পানি। আর পানির অণু ধরে হিসাব করলে ৯৯%-ই পানি। এত গুরুত্বপূর্ণ একটা পদার্থ দেহের ভেতর শুধু পরোক্ষ ভূমিকা পালন করবে— এটা হতেই পারে না। Dr. Masaru Emoto-এর গবেষণাকে তিনি পানির ৪র্থ দশা দিয়ে ব্যাখ্যা করেন।
তাহলে, Dr. Masaru Emoto এবং Prof. Gerald Pollack এর চিন্তাধারা মিলে গেল। মানে পানির ভৌত ধর্ম (Physical property) পজিটিভ আবেগ-সুর-প্রার্থনা-শব্দ এসবে পরিবর্তন হয়, নেগেটিভ আবেগ-কথাতেও বদলে যায়। এত কথা কেন বললাম, সামনে আসল মজা।
Dr. Masaru Emoto-কে এক মুসলিম কলিগ জমজমের পানি ও কাবার ছবি দেয় পানির প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য। কুরআন তিলওয়াতের প্রতি পানির প্রতিক্রিয়াও দেখা হয়, ছবি তোলা হয় ক্রিস্টালের।
তিনি যমযমের পানিকে ক্রিস্টাল করে আশ্চর্য এক বিষয় লক্ষ্য করেন। যমযমের পানি ‘ডাবল ক্রিস্টাল’ তৈরি করেছে, একটার ওপর আরেকটা, যা আর কোন পানির স্যাম্পল করেনি। এরপর তিনি আগ্রহী হয়ে এটা নিয়ে আরও গবেষণা করেন। এবং তাঁর বইতে লেখেন। এজন্যই আমি জাপান থেকে অরিজিনাল জাপানি বই আনার চেষ্টা করছি, আমার ভয় হয় ইংরেজি অনুবাদে সম্ভবত এই লেখাগুলো সরিয়ে ফেলা হতে পারে। পরে মূল বই থেকে রেফারেন্স দেব ইনশাআল্লাহ।
আপাতত সৌদি আরবের Taibah University –র Dr. Wafa Mansour Frigui এর একটা প্রেজেন্টেশন থেকে প্রাপ্ত তথ্য শেয়ার করি। Researchgate –এই পাবেন এটা। [11] Dr. Masaru Emoto যমযমের পানির ব্যাপারে প্রাপ্ত ফলাফল যা তাঁর বইয়ে লিখেছেন—
১. এর মত গুণগত বিশুদ্ধতা পৃথিবীর আর কোন জায়গার পানিতে পাওয়া যায়নি।
২. তিনি একটা প্রযুক্তি ব্যবহার করেন যমযমের পানি গবেষণায় যার নাম NANO। এবং দেখেন, ১ ফোঁটা যমযমের পানিকে ১০০০ ফোঁটা নর্মাল পানির সাথে মিশালে নর্মাল পানিও যমযমের মত গুণাগুণ অর্জন করে।
৩. এক ফোঁটা যমযমের পানিতে যে পরিমাণ মিনারেলস থাকে আর কোন পানিতে এত পাওয়া যায় না।
৪. তিনি আরও পান যে, যমযমের পানির গুণাগুণ ও উপাদান পরিবর্তন হয় না, করা যায় না, কেন তা তিনি জবাব দেননি।
৫. এমনকি তিনি যমযমের পানি রিসাইকেল করেন, তাতেও তার মান পরিবর্তন হয়নি।
পানির সামনে কুরআন তিলওয়াত প্লে করে তিনি পান সবচেয়ে নিখুঁত আকারের ষড়ভুজাকার (Hexagonal) ক্রিস্টাল। তাঁকে আরও জানানো হয়, মুসলিমরা ১৪০০ বছর ধরে পানি পানের আগে পানির সামনে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে। তিনি জানান, এর ফলে পানির গুণাগুণ স্পষ্টতই বেড়ে যাওয়ার কথা। ২০১৪ সালেই Dr. Masaru Emoto পরলোকগমন করেন। অমুসলিম হিসেবে উনি অনেকটা করেছেন। এখন বাকি কাজ আমাদের। কেউ আছেন?
ক.
Dr. Masaru Emoto-এর মৃত্যুর পর তাঁর প্রতিষ্ঠিত ইন্সটিটিউটের গবেষকগণ এখন এই ক্রিস্টালের স্বাস্থ্যগত দিকটা নিয়েই কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন Yasuyuki Nemoto, Director of IHM General Institute. মনোজগতের আবেগিক পরিবর্তন, প্রার্থনা, দর্শন (টিভি,পর্নোগ্রাফি), কথোপকথন, আত্মবিশ্বাস, মানসিক শক্তি— এই বিষয়গুলো কোষস্থ ‘৪র্থ দশার পানি’-কে কীভাবে প্রভাবিত করে, জৈবরাসায়নিক বিক্রিয়াগুলোকে কীভাবে প্রভাবিত করে, আমাদের দেহের প্রতিরক্ষা (Immunological Capacity), স্বয়ংক্রিয় আরোগ্যলাভকে (Self-Healing) ত্বরান্বিত করে; এ বিষয়গুলো নিয়েই চলছে তাদের পরবর্তী গবেষণা।
জানি না এরকম অলাভজনক, বাণিজ্য ধ্বংসকারক, ইসলামের পক্ষে চলে যায় এমন গবেষণা পুঁজিবাদী মেইনস্ট্রীম মিডিয়াতে কতটুকু আসবে। মুসলিম বিজ্ঞানীদের ঘুম যতদিন না ভাঙছে; বিলিভ ইট অর নট—কুরআনের সাথে নিবিড় সম্পর্ক আপনাকে সুস্থ রাখে।
কুরআনের কারণে যে নিখুঁত ক্রিস্টালটা হল, মানে পানি তার সবচেয়ে নিখুঁত বৈশিষ্ট্য ধারণ করেছে। পানির তৈরি করার কথা ষড়ভুজাকার ক্রিস্টাল, এই অবস্থায় পানি সেটাই করেছে যেটা আসলেই তার করার কথা। মানে এটাই হচ্ছে পানির যথার্থ অবস্থা। আল্লাহ বলেছেন, এই কুরআন হল শেফা (রোগমুক্তি)। [12] মুসলিমরা নামাযে তিলওয়াত করে, নামাযের বাইরে দেখে তিলওয়াত করে, প্রতিদিন বিশেষ কিছু সূরার আমল (ইয়াসীন, সাজদাহ, ওয়াক্বিয়া, মুলক) ওযীফা হিসেবে করে। এর স্বাস্থ্যগত প্রভাব ডেফিনিটলি আছে, থাকতেই হবে।
খ.
বিভিন্ন অসুখে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়াত বা দুয়া পড়ে ফুঁক দিয়ে রুকিয়া করেছেন। আজ বিজ্ঞান বলছে দেহস্থ পানির ওপর এর প্রভাব আছে। ঝাড়ফুঁক-পানিপড়া এগুলো নিয়ে কত ঠাট্টা-বিদ্রূপই না করেছে একসময়। বিজ্ঞান যত বড় হচ্ছে তত সুন্নাত আবিষ্কার করছে, করবে।
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত,
জিবরীল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, ‘হে মুহাম্মাদ! আপনি কি অসুস্থ?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ।’’ জিবরীল তখন এই দো‘আটি পড়লেন, ‘বিসমিল্লা-হি আরক্বীক, মিন কুল্লি শাইয়িন ইউ’যীক, অমিন শাররি কুল্লি নাফসিন আউ ‘আইনি হা-সিদ, আল্লা-হু ইয়াশফীকা, বিসমিল্লা-হি আরক্বীক।’
অর্থাৎ আমি তোমাকে আল্লাহর নাম নিয়ে প্রত্যেক কষ্টদায়ক বস্তু থেকে এবং প্রত্যেক আত্মা অথবা বদনজরের অনিষ্ট থেকে মুক্তি পেতে ঝাড়ছি। আল্লাহ তোমাকে আরোগ্য দান করুন। আল্লাহর নাম নিয়ে তোমাকে ঝাড়ছি। [13]
গ.
‘পানিপড়া’ এখন আর হাসাহাসির বস্তু নেই, কুসংস্কারের পর্যায়ে নেই। এটা এখন বাস্তবতা। পানির ওপর কুরআনের আয়াতের প্রভাব— এটা এখন বিজ্ঞান। এবং দৃশ্যমান বিজ্ঞান। আপনি একটু আগেই সে ছবি দেখেছেন। হেটার্সরা বলবে, হুজুররা এবার ‘পানিপড়া’ দিয়ে ধান্ধা করবে। হুজুরদের ডিসটার্ব করবেন না। সূরা ফাতিহা, তিন কুল,আয়াতুল কুরসি আপনি নিজেই পারেন। আর নির্ভরযোগ্য রুকিয়ার কিতাব কিনে নেন। উযু করে নিজেই করেন, পারলে রোগী নিজেই করুক। আরও ভাল। আলিম-উলামার ইমেজ নষ্ট করার জন্য আমাদের অলসতাই দায়ী। [14]
ঘ.
নজর লাগা ব্যাপারটা এখন প্রমাণিত। এটাও এখন আর কুসংস্কার বলার সুযোগ নেই, যদি বিজ্ঞান বুঝে থাকেন বিজ্ঞানীদের মত করে। আর যদি পুঁজিবাদী বাণিজ্য দিয়ে বুঝে থাকেন তাহলে ভিন্ন কথা। পর পর দুটো আন্তর্জাতিক রিসার্চে আমরা দেখেছি কিভাবে পানির ধর্ম পরিবর্তিত হয়েছে ইমোশন দেবার কারণে। কারো মনের নেগেটিভ ইমোশন আমার দেহস্থ পানিকে প্রভাবিত করে আমাকে অসুস্থ করতে পারে। আধুনিক বিজ্ঞানের ইঙ্গিত এখন এদিকেই।
আবূ হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: বদ নজর সত্য। [15]
আম্মাজান আয়িশাহ (রা.) থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে আদেশ করেছেন কিংবা তিনি বলেছেন, নজর লাগার কারণে ঝাড়ফুঁক করতে। [16]
উরওয়া ইবনু যুবাইর (র) থেকে বর্ণিত,
নবী-পত্নী উম্মে সালমা (রা)-এর ঘরে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবেশ করলেন। তখন ঘরে একটি বাচ্চা ক্রন্দন করিতেছিল। লোকেরা আরয করল, বাচ্চাটির ওপর বদনজর লেগেছে। তখন রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বদনজরের জন্য ঝাড়ফুঁক করাচ্ছো না কেন ? [17]
ঙ.
ধরেন, আপনার অপছন্দের কিছু একটা ঘটল। আপনি বললেন ‘ওহ শিট’ না ‘ওহ নো’ সাথে আছে লোকসানের বেদনা; আপনি নিজের ভেতরই প্রেসার অনুভব করবেন। আর আপনি বললেন ‘ইন্নালিল্লাহ’ (নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য), সাথে এই অনুভূতি— আমি ও আমার সবকিছু আল্লাহর, আমি নিজেই ক্ষণস্থায়ী, আমার এই লোকসান তো আরও ক্ষণস্থায়ী। আপনার মানসিক চাপ অনেকটাই কমে গেল। কমে গেল অনেকগুলো বড় বড় রোগের রিস্ক ফ্যাক্টর— উত্তেজনা, অ্যাংজাইটি।
কথায় কথায় বিসমিল্লাহ-আলহামদুলিল্লাহ-ইন্নালিল্লাহ-সুবহানাল্লাহ বলে মুসলিমরা, প্রত্যেক কাজের আগে, ঘুম থেকে নিয়ে সহবাস, সবকিছুর আগে দুআ শিখিয়েছেন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম— এরও প্রভাব আছে দেহের এই বিপুল পরিমাণ পানির ওপর। একজন মানুষের পুরো দেহের ওজনের ৬০% পানি। ৭০ কেজি ওজনের একজন মানুষের দেহে ৪২ লিটার পানি। আপনার ১ ট্রিলিয়ন মানে ১০০,০০০,০০০,০০০ পিস কোষের ভেতরে আছে ২৮ লিটার পানি (Intracellular fluid) আর বাইরে আছে ১৪ লিটার (Extracellular fluid)। এই বাইরের ১৪ লিটারের মাত্র ৩ লিটার হল রক্তে (blood plasma), আর ১১ লিটার টিস্যু স্পেসে (interstitial fluid)। [18] এই বিপুল পানির মিডিয়ামে ঘটে চলেছে হাজারও রাসায়নিক বিক্রিয়া। পানি যদি তার নির্ধারিত ধর্ম বজায় রাখতে না পারে, বিক্রিয়ায় সমস্যা হতে বাধ্য।
তাই পাঠকবৃন্দের প্রতি আরজ, বিজ্ঞান বিজ্ঞানের মত এগোক। আমরা আগের মতই ‘ভক্তির মোড়কে বিজ্ঞান’ খাই। ডাক্তারের কাছে চিকিৎসার পাশাপাশি কুরআন-হাদিসে বর্ণিত চিকিৎসাও ফলো করি। এজন্য নির্ভরযোগ্য একটি কিতাব হল:
আল ইলাজ বির রুক্বা মিনাল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ, , শায়খ সাঈদ ইবনে আলী ইবনে ওহাফ আল-কাহতানী রহ. রচিত।[19] কিতাবটিতে বিশেষ বিশেষ অসুখের জন্য বিশেষ বিশেষ সূরার আমল, বা আয়াতের আমল দেয়া আছে। সম্প্রতি
মাকতাবাতুল আসলাফ প্রকাশিত তরুণ আলিম
মাওলানা আবদুল্লাহ আল মাহমুদ রচিত
‘রুকইয়াহ’ কিতাবটি এ বিষয়ে দারুণ একটি কিতাব। প্রতি ঘরে ঘরে কিতাবটি থাকা প্রয়োজন।
Discussion about this post