১.সাহল ইবনু হুনাইফ (রা:) আনহু কোথাও গোসলের জন্য জামা খুলেছিলেন।তিনি অত্যন্ত সুশ্রী এবং ফর্সার অধিকারি ছিলেন। বদরি সাহাবী আমির ইবনু রাবীয়া ( রা:) তাকে দেখতে পেয়ে বললেন, এতো সুন্দর কাউকে আমি জীবনে কখনো দেখিনি ; এমনকি সুন্দরী যুবতিও এত সুন্দর দেহবিশিস্ট দেখিনি। আমিরের এই কথা বলার সাথে সাথে সাহল ইবনু হুনাইফ সেখানে বেহুশ হয়ে পরল।তার গায়ে জ্বর চলে আসলো এবং তিনি জ্বরের প্রচন্ডভাবে ছটফট করতে লাগলেন।অন্য সাহাবিরা রাসুল (সাঃ) – কে অবস্থা জানালেন। সংবাদ পেয়ে নবিজী (সাঃ) দেখতে আসলেন।সাহল রা. কে হঠাত করে এমনটা হবার কারন জিজ্ঞেস করলে তিনি পুরো ঘটনা খুলে বল্লেন।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তখন বললেন, তোমরা কেন তোমাদের ভাইকে নজর দিয়ে হত্যা করছ? তুমি যখন তাকে দেখলে, তখন বরকতের দোয়া কেন করলেনা? নিশ্চয়ই বদ নজর সত্য।(অর্থাৎ দোয়া করলে আর নজর লাগতোনা) এরপর নবিজী (সাঃ)আমির ইবনু রাবিয়া (রাঃ) আনহা কে বললেন, তার জন্য অজু কর।তখন তিনি অজু করলেন।তারপর নবিজী সাঃ এর নির্দেশে অজুর পানি সাহল ইবনু হুনাইফ (রাঃ) এর গায়ে ঢেলে দিলেন। তখন আল্লাহর রহমতে তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেন।(মুয়াত্তা মালিক: ১৬৮১)
২. রাসুল (সাঃ) বারবার বাদ নজরের সাথে ভাগ্যের তুলনা করেছেনে। যেমন ঃ- আল্লাহর ফায়সালা এবং ভাগ্যের পরে আমার উম্মত সবচেয়ে বেশি মৃত্যু বরন করবে বদ নজরের কারনে। (মুসনাদে আবু দাউদ তয়ালিসি: ১৮৫৮)
৩. যদি কোনকিছু ভাগ্যেকে অতিক্রম করতে পারতো, তবে তা হত বদনজর।(সুনানে আত তিরমিজি : ২০৫৯)
বদ নজরের কিছু লক্ষন অবিজ্ঞতা থেকে
——————————————————-
১. শরীরে জ্বর থাকা, কিন্তু থার্মোমিটারে না উঠা। এধরণের অন্য কোন অসুস্থ থাকা, কিন্তু মেডিকেল টেস্টে ধরা না পরা।
২. বিভিন্ন ধরনের অসুখ লেগে থাকা। একটা অসুখ ভালো হতে না হতেই আরেকটা শুরু হওয়া।
৩. সাধারণ রোগ যেমন ঃ- সর্দি কাশি,জ্বর, ডায়রিয়া ইত্যাদি দেখা দিয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসা করেও তা ভালো না হওয়া,ঔষধে কাজ না করা।
৪. পড়াশোনা বা কাজে মন না বসা।নামাজ – জিকিরে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা। কিছুতেই মনোযোগ দিতে না পারা।
৫. প্রায়শই শরির দুর্বল থাকা। বমি বমি ভাব লাগা।
৬. সবসময় ঘুম ঘুম ভাব,সারাদিন হাই উঠে।
৭. অতিরিক্ত চুল পরা। সেম্পুতে কাজ না হওয়া।
৮. ক্ষুধামন্দা, খাবারে রুচি না পাওয়া।
৯. অহেতুক মেজাজ বিগ্রে থাকা।
১০. বুক ধরফর করা, দমবন্দ বা অস্বস্তি লাগা।
১১. পেটে প্রচুর গ্যাস হওয়া।
১২. হাতপায়ে মাঝেমধ্যে ব্যাথা করা। কিংবা পুরো শরীরে ব্যাথা অনুভব করা।
১৩. ব্যবসায় ঝামেলা লেগে থাকা। কোন ভাবেই উন্নতি না হওয়া।
১৪. যে কাজে ভালো অবিজ্ঞতা রয়েছে সেটা করতে গেলেই অস্থির হয়ে যাওয়া। মনে না চাওয়া।
১৫. স্বপ্নে মৃত মানুষ দেখা ইত্যাদি…..
উল্লেখিত বিষয়গুলো এমন না যে, শুধু বদ নজরের কারনেই এসব হয়।অন্য কারণে ও হতে পারে।এ ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা বা অন্যান্য সমস্যা মিলিয়ে বুঝতে হবে সমস্যা কোথায়।এরপরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য সরাসরি রুকইয়াহ করে দেখতে পারেন।
এই সকল রোগের জন্য চিকিৎসক এর সাথে জরুরী পরামর্শ করুণ।
এখন জানব নিজের অবিজ্ঞতা থেকে
———————– ———————– —
ছেলেটির বয়স ৯-১০ বছর । বাড়ী তার চট্টগ্রামে। ছেলেটি খুবই হাসিখুশি প্রকৃতির ছিলো। কথাবার্তা এমন ভাবে বলতো মানুষ অবাক হয়ে যেত! একেবারেই জ্ঞানী মানুষের মতো কথা বলতো।হঠাৎ করে একেবারে নির্জিত হয়ে গেলো। কারো সাথে কোন কথাবার্তা বলেনা।
এমনকি মা বাবার সাথেও না। খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো করেনা। সারাক্ষণ মন খারাপ করে বসে থাকে। বিষন্ন মনে কথাগুলি বললেন চট্টগ্রাম থেকে ট্টিটমেন্ট নিতে আসা ছেলেটির বাবা।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম প্রব্লেম শুরু কখন থেকে?
তিনি জানান: আমাদের সাথে একদিন বেড়াতে গিয়েছিল,সেখান থেকে ফেরার পথে গাড়ীতে বসে কথাবার্তা বলছিল,হটাৎ করে দেখি সে নিশ্চুপ, তখন আমরা বিষয়টি লক্ষ্য করিনি ; কিন্তু তখন থেকেই প্রব্লেম শুরু।এরপর ডাক্তার দেখিয়েছি,ওজা – ফকির, কাউকে বাদ রাখেনি কিন্তু কোন কাজ হয়নি।
আমি ছেলেটির অভিভাবকদের বসলাম,আপনাদের ছেলের মারাত্মক বদ নজর লেগেছে এবং এর ইফেক্ট এতই সিরিয়াস যে, আপনারা নিজেই তার প্রমান পাচ্ছেন।
যাইহোক, আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন।ঘাবড়ানোর কিছুই নেই।এরপর তার উপর রুকইয়াহ শুরু করা হলো। প্রথম যখন তার উপর রুকইয়াহ করলাম, তখন কোন প্রতিক্রিয়া হলোনা।
পরে যখন আবার একটানা রুকইয়াহ করলাম। তখন কিছুক্ষণ পর তার প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো। সাথে সাথেই সে কিছুটা সাভাবিক হয়ে যায় আলহামদুলিল্লাহ। সাথে দুই সপ্তাহের আমল বলে দিলাম এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা বলে দিলাম।
তাদেরকে ধৈর্যের সাথে আমল করতে বললাম। দুইসপ্তাহের মধ্যেই সে সুস্থ হয়ে ওঠে।
লেখক – Raqi Abdus Salam
Discussion about this post