শরিয়তে আল্লাহ আমাদের দ্বীন ও দুনিয়ার সমস্ত ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দিয়ে দিয়েছেন। ইসলামি উপায়ে স্বামী বা স্ত্রী নির্বাচনের ব্যাপারেও দিকনির্দেশনা আছে। নিচে কিছু দিকনির্দেশনা এখানে দিলাম। এর সবগুলোই সরাসরি শরিয়ত থেক নেওয়া না, আমার এবং অন্য মেয়েদের অভিজ্ঞতার আলোকেও কিছু আছে-
❒ বিশুদ্ধ নিয়ত রাখা। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, তাঁর নির্দেশ মেনে আরো বেশি তাঁর ইবাদাত করতে বিয়ে করা। যদি অন্য কোনো নিয়ত থাকে, যেমন একটা ব্রিটিশ পাসপোর্ট পাওয়া বা কারো বিয়ে ভেঙে দেওয়া ইত্যাদি, তাহলে নিজের পক্ষে আল্লাহর রহমত আশা করার দরকার নেই।
❒ নিজের অধিকার এবং দায়িত্ব সম্বন্ধে জানা উচিত। একজন মুসলিম হিসেবে কোনো কিছু করার আগে তা সম্বন্ধে জেনে নেওয়া প্রয়োজন। ইসলামি বিয়ের ব্যাপারে জ্ঞান অর্জন করে নিন, নিজের এবং জীবনসঙ্গীর অধিকারগুলো জানুন, সেগুলো পুরণ করতে প্রস্তুতি নিন, অন্তত মানসিকভাবে।
❒ পরিবারকে পাশে রাখুন। তাদের দূরে সরিয়ে দেবেন না, তারা মুসলিম হোক বা না হোক। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় তারা না থাকলেও বিয়ের অনুষ্ঠান এবং আনুষঙ্গিক কাজে তাদেরকে রাখুন। পরিবারের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকলে এবং তাদের পাশে রাখলে ছেলে ব্যাপারটাকে আরো গুরুত্ব দিবে এবং আপনার সিদ্ধান্তকে সম্মান করবে।
❒ বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভালোমতো খোঁজখবর নেওয়া উচিত। এটাকে একটা বিনিয়োগের মতো ভাবুন। কোথাও এক লাখ ডলার বিনিয়োগ করার আগে আপনি নিশ্চয়ই ঐ কোম্পানি, তার পরিচালক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, কোম্পানির অতীত, তাদের সুনাম বা দুর্নামের ব্যাপারে খোঁজখবর নেবেন। বিয়ের ব্যাপারেও এভাবেই ভাবুন। ছেলের ব্যাপারে খবর নিন, তার বন্ধুদের থেকে, আপনার বন্ধুদের সাহায্য নিন, তার শিক্ষক, সে কাদের সাথে মিশে ইত্যাদি ব্যাপারে। তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না।
❒ সম্পর্কটা স্বচ্ছ রাখুন। কোনো ধরনের জিনায় জড়ানোর মানসিকতা যেন না থাকে। তার সাথে একা দেখা করা, ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলা, বারবার ছবি দেখা এসব এড়িয়ে চলুন। এগুলো করার অনুমতি নেই শুধু এ কারণে এড়াবেন, এমন না। নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক বেড়ে গেলে আপনাকে অনেক কিছুতে আপস করতে হতে পারে।
❒ সৎ থাকুন। আপনি কী কী করতে পারেন, স্বামী হিসেবে তার কাছ থেকে কী কী আশা করেন, সেগুলো নিয়ে কথা বলুন। সে কী চায় তা নিয়েও কথা বলুন। এমনটা আশা করবেন না যে সে সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়াবে, সপ্তাহের ছুটির দিনে দামি দামি হোটেলে থাকবে—অথবা এগুলোর কিছুই করবে না। সব মুসলিম পুরুষ একরকম হয় না, সব মুসলিম নারীও একরকম হয় না। আপনি সবসময় ঘরে থাকা গৃহবধূ হতে চাইলে সেটা খুলে বলুন; কাজ করতে বা পড়াশুনা চালিয়ে যেতে চাইলে সেটাও বলুন। নিজে নিজে ধারণা করে বিয়ে করে নিলে ভুল হতে পারে, আর তাতে বেশ সংঘর্ষও তৈরী হবে। আপনি হয়তো এমন কাউকে বিয়ে করলেন যে চাইল তার বউ মিসেস ক্লিভারের মতো চমৎকার গৃহিণী হবে অথচ দেখল তার বউ মার্থা স্টুয়ার্ট, একজন অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী।
❒ নিজেকে সস্তায় বিকিয়ে দেবেন না। আপনি কী চান, সেগুলো যদি ইসলামি আইনমতে বৈধ হয়, তাহলে চুক্তিনামা এবং মোহরানায় সেগুলোর কথা বলতে ইতস্ততবোধ করবেন না। খুব বেশি বড় মানের মোহরানাও চাবেন না, রাসূল (সা.) এমন করতে নিষেধ করেছেন। আবার নিজের দাম খুব কমিয়েও ফেলবেন না। মোহরানা আপনার অধিকার এবং এখানে কর্তৃত্ব করবার অধিকার কারো নেই। আপনাকে পাওয়ার জন্য একটু কষ্ট করতে ছেলে কষ্ট পাবে না। তবে যিনি বাস চালান, তার কাছে আরব ধনকুবেরদের মোহরানাও চাইবেন না।
❒ ইস্তিখারা করুন। আল্লাহর সাহায্য চাওয়ার নামাজ। কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে দুই রাকাত নামাজ পড়ে ইস্তিখারার দুআ পড়ুন। যাতে আল্লাহ আপনার পথ সহজ করে দেন। বিয়েটা যদি আপনার এবং আপনার দ্বীনের জন্য ভালো না হয়, তাহলে আপনি বাধা বিপত্তির মুখে পড়বেন, বুঝতে পারবেন এই মানুষটা আপনার জন্য সঠিক মানুষ না।
দেখা হওয়ার তিনদিন পর আমি যখন আমার স্বামীকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেই, তখন ইস্তিখারা করে কোনো ইঙ্গিতের অপেক্ষা করছিলাম। পরদিন আমার মা’কে ফোন দেই বিয়ের কথা বলার জন্য। মা সবসময়ই আমাকে বলেছেন বয়স সাতাশ হওয়ার আগে বিয়ে না করতে। আমার বয়স তখন বাইশ, একটু নার্ভাস লাগছিল। কিন্তু তিনি আমাকে বললেন, “জানো, কেন জানি না, আমার ভালো লাগছে তোমার এই ব্যাপারে।” এটাকেই আমি ভালো ইঙ্গিত ধরে নিলাম।
❒ আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখুন। আপনি আন্তরিকভাবে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চললে আল্লাহ আপনার জীবন সুন্দর করে দেবেন, বিয়েতে সফলতা দেবেন। কী হবে, কী হতে পারে এসব নিয়ে বেশি বেশি ভাববেন না। আস্থা রাখুন আল্লাহ আপনাকে রক্ষা করবেন। আল্লাহর স্মরণ, দুআ, ভালো কাজ এসবের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ভালো রাখুন।
.
বই: ফ্রম মাই সিস্টারস’ লিপস্
মূল: নাইমা বি. রবার্ট
অনুবাদ: নাবিলা আফরোজ জান্নাত
সম্পাদনা: সাজিদ ইসলাম
Bookmark Publication
Discussion about this post