আবির ও তার বন্ধু সাকিবের স্মার্টফোনে হঠাৎ একটি ম্যাসেজ ভেসে উঠলো-
“রবি দিচ্ছে আপনাকে এক অবিশ্বাস্য বোনাস অফার! আগামী মাসেই রয়েছে আপনার জন্য একটি বিশেষ দিন, যেদিন মাত্র ১০০টাকা রিচার্জ করলেই পরবর্তী মাসে আপনি পাচ্ছেন ১,০০,০০০টাকা পুরস্কার! অফারটি পেতে প্রতিদিন রিচার্জ করুন মাত্র ১০০টাকা।”
একদিনের ভুলে হাতছাড়া হতে পারে একটি লোভনীয় বোনাস অফার। তাই অফারটি পেতে কিন্তু আবির সেই মাসে কোনোদিন ১০০টাকা রিচার্জ করতে ভুল করেনি।
পরবর্তী মাসে সে সত্যিই উক্ত বোনাস অফারটি লাভ করলো। সে তো বেজায় খুশি! ভাবছে, কতই না ভাগ্যবান সে!
অন্যদিকে তার বন্ধু সাকিব? আন্দাজ করে উক্ত মাসের কয়েকদিনকে নির্দিষ্ট করে বলে, বিশেষ দিনটি এ কয়েকদিনের মধ্যে একটি হতে পারে তাই আমি কেবল একদিনই রিচার্জ করবো। যেই বলা সেই কাজ! এখন সাকিবের প্রতি আপনার সম্বোধন নিশ্চই হাদারাম বা গাধা টাইপেরই হবে নিশ্চয়।
অতঃপর পরবর্তী মাসে সে উক্ত অফার থেকে বঞ্চিত হলো, আর এটিই ছিল বোধহয় তার জীবনের সবচেয়ে আফসোসের বিষয়।
এটি ছিল শুধুমাত্র একটি কল্পকাহীনি, এবার আসি মূল বিষয়ে। চলছে বারাকাতময় মাস রামাদান। আর এ মাসেরই একটি রাতে রয়েছে মুমিনদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশাল বোনাস অফার, যার নাম হচ্ছে লাইলাতুল ক্বদর, যে রাতে আপনার একটি ইবাদাত এক হাজার মাসের ইবাদাতের চেয়েও অধিক উত্তম। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা বলেন-
“ক্বদর রজনী এক হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম।” [সূরা ক্বদর ০৯:০৩]
আবার এ রাতে রয়েছে গুনাহ মাফের আরেকটি বিশাল ডিসকাউন্ট অফার!
আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিতঃ রাসুল (সা) বলেছেন, “যে ব্যাক্তি ঈমানের সাথে , সাওয়াবের আশায় লাইলাতুল ক্বদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে, তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয়।” [সহীহ বুখারী- ২০১৪]
তাই রাসুল (সা) নিজেও এ রাতের বোনাস প্রাপ্তীর আশায় রাত্রীযাপন করতেন এবং কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদ আদায় করতেন।
আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন , “যখন লাইলাতুল ক্বদরের সময় আসতো তখন রাসুল (সা) তার লুঙ্গি কষে নিতেন এবং রাত জেগে থাকতেন ও পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন।” [সহীহ বুখারী – ২০২৪]
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, রামাদানের কোন রাত্রীতে লুকিয়ে আছে এই মহিমান্বিত রাতটি? তা কিন্তু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা নির্দিষ্ট করে জানিয়ে দেননি বা রাসুলকে (সা) জানিয়ে দিলেও পরবর্তীতে বিশেষ কারণে তা ভুলিয়ে দিয়েছেন।
তাই রাসুল (সা) রামাদানের শেষ দশকে লাইলাতুল ক্বদর অনুসন্ধান করতে বলেছেন।
“সম্ভবতঃ এর মধ্যে তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে। তোমরা নবম, সপ্তম ও পঞ্চম রাত্রীতে তা তালাশ করো।” [সহীহ বুখারী- ২০২৩]
আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা) বলেছেন, “তোমরা রামাদানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রীগুলোতে লাইলাতুল ক্বদর অনুসন্ধান করো।” [সহীহ বুখারী- ২০১৭]
অর্থাৎ রামাদানের ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯তম রাত্রীতে লাইলাতুল ক্বদর পালন করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এখন আমাদের সমাজে দেখা যায়, সাধারণত ২৭ রামাদানকে কেন্দ্র লাইলাতুল ক্বদর পালন করা হয়। যদিও এ রাতটিও ক্বদরের রাত্রীগুলোর মধ্যে একটি এবং জোর দাবিদার, কিন্তু যেহেতু হাদীসে নির্দিষ্ট করা হয়নি সেহেতু এ রাতে ক্বদর থাকতেও পারে আবার নাও পারে, এর কোন নিশ্চয়তা নেই। আর যদি না থাকে তবে এই বিশাল অফারটি আপনি মিস করবেন আর পরকালে আপনার অবস্থা সাকিবের রবির অফার মিস করার চেয়েও হাজারগুন বেশি আফসোসের হবে। আর যদি প্রতিটি রাত্রীতেই ইবাদত করেন তাহলে অফার মিস হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই, কেননা উক্ত রাত্রীগুলোর মধ্যে যে যেকোন একটিতে ক্বদর রয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
আরেকটি বিষয় কী জানেন? ধরুন কোনো একটি মাসে অফিস থেকে আপনাকে যদি বলা হয় এই মাসে সবার জন্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। সবাই এই মাসে বেশি বেশি পরিশ্রম করবে, সবচেয়ে বেশি পরিশ্রমীদের জন্য পুরস্কার আছে। এটা শুনে অফিস জুড়ে তোলপাড় লেগে গেল। সবার একটাই লক্ষ্য- প্রমোশন আর বসের সান্নিধ্য। আর মাসের শেষে নির্দিষ্ট একটি তারিখ বলে দেওয়া হলো যে ঐদিন মিটিং এবং সবার উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। অনুপস্থিতির ফল হিসেবে পুরো মাসের বেতন কাটা যাবে। এখন যদি আপনি ঐদিন মিটিং কোনো না কোনোভাবে ধরতে না পারেন তাহলে আপনার অবস্থা কী রকম দাঁড়াবে? আর এরকম একটা মাসের এরকম একটা মিটিং আপনি কি আদৌ সুস্থ মস্তিষ্কে ত্যাগ করতেন?
নিয়ামত যতবড় এর ওজনও তত বড়। তাই লাইলাতুল ক্বদর যদি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হতো আর তারপরেও যদি বান্দা তা ধরতে না পারত, হেলায় কাটিয়ে দিত তাহলে তার অবস্থা কী রকম দাঁড়াত? মহান রাব্বুল আলামীন তাই এতটাই দয়ালু যে বান্দাদের জন্য তিনি তা নির্দিষ্ট করে দেননি। বরং অভাগার জন্য ছাড় দিয়েছেন আর ভাগ্যবানের জন্য রেখেছেন সিন্দুক ভরা উপহার।
আমরা কোনটা? ভাগ্যবান না সেই অভাগা? এই অফার যেন হাত ফসকে না যায়। সুযোগ সীমিত সময়ের জন্য।
সুযোগ সীমিত সময়ের জন্য |
মোঃ তাওহীদুল ইসলাম ।
নোঙর – Nongor
Discussion about this post